হাওজা নিউজ এজেন্সি: আজ ভোররাতে ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস এক বিবৃতিতে এই ঘোষণা দেয়। দলটি জানিয়েছে, এই চুক্তিতে “গাজার যুদ্ধের অবসান, দখলদার বাহিনীর প্রত্যাহার, মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশ এবং গাজায় অবশিষ্ট ইসরায়েলি বন্দিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়”-এর বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
হামাস আরও জানিয়েছে, চুক্তি স্বাক্ষরের আগে তারা বিভিন্ন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীর সঙ্গে “দায়িত্বশীল ও গভীর আলোচনা” করেছে। আন্দোলনটি পুনর্ব্যক্ত করেছে যে, “ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে চলমান গণহত্যা বন্ধ করা ও গাজা উপত্যকা থেকে দখলদারিত্বের অবসান ঘটানো”-র গভীর আকাঙ্ক্ষা থেকেই তারা এই চুক্তিতে পৌঁছেছে।
ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে হামাস, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি এবং গাজার প্রশাসন একটি ফিলিস্তিনি জাতীয় সংস্থার কাছে হস্তান্তরে সম্মত হওয়ার পর, এই চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনা শুরু হয়।
আঞ্চলিক প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো হামাসের এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়ে একে পরিমিত, দায়িত্বশীল ও রাজনৈতিকভাবে কৌশলপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে। হামাস ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ফিলিস্তিনি বন্দিদের একটি তালিকা পাঠিয়েছে।
তবে হামাস, চুক্তিতে সাড়া দেওয়া সত্ত্বেও, ২০২৩ এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত অনুরূপ চুক্তিগুলোতে ইসরায়েলের বিশ্বাসঘাতকতার কথা উল্লেখ করে পুনরায় সতর্ক করেছে যে, তেল আবিবের পক্ষ থেকে চুক্তির ধারা ভঙ্গ বা প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের আশঙ্কা রয়েছে।
আন্দোলনটি জোর দিয়ে বলেছে, চুক্তির প্রতিটি ধারা ও শর্ত তেল আবিবের পক্ষ থেকে অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। হামাস আরও আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলের মিত্র দেশগুলোকে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে, যেন তারা চুক্তিতে সম্মত হওয়া বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন বিলম্বিত করা বা ব্যাহত করার কোনো সুযোগ ইসরায়েলকে না দেয়।
ইহুদিবাদী ইসরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহায়তায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ শুরু করে। এই যুদ্ধের ফলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ, দুর্ভিক্ষ এবং মানবিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি প্রায় এক লক্ষ ফিলিস্তিনি শহীদ ও নিখোঁজ হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আরও এক লক্ষেরও বেশি মানুষ আহত ও পঙ্গু হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত প্রস্তাব ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করে, তেল আবিব এখনও পর্যন্ত গাজার বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।
ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে প্রায় ৭৫ বছর ধরে চলা দখল, নিপীড়ন ও অবরোধের জবাবে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধযোদ্ধারা ‘তুফানুল আকসা (আল-আকসা ফ্লাড)’ নামে ঐতিহাসিক এক অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে প্রায় এক হাজার ইসরায়েলি নিহত হয় এবং আড়াই শতাধিক সেনা ও বেসামরিক নাগরিক বন্দি হয়। এর প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল একই দিন থেকে গণহত্যা অভিযান শুরু করে এবং আজও তা অব্যাহত রেখেছে।
জাতিসংঘের একাধিক প্রস্তাব অমান্য করে, ইসরায়েল এখনো ফিলিস্তিনের অধিকাংশ অঞ্চল দখল করে রেখেছে—যার মধ্যে রয়েছে মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস (আল-কুদস) শহরও। একইভাবে ইসরায়েল সিরিয়া ও লেবাননেরও বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে রেখেছে।
আপনার কমেন্ট